বি চন্দ্রাবতীর আত্নাহুতি!!বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী!!চন্দ্রাবতীর বাড়ি নিয়ে বিতর্ক!

May 14, 2024 26 Views

কবি চন্দ্রাবতী জন্ম: ১৫৫০ সালে ততকালীন কিশোরগঞ্জ-এর পাতুয়ারি গ্রামে। তখনকার সময় এই এলাকা হয়তো এমনটা ছিলো না, বিশেষ করে নাম সম্পর্কে বলা যায়। তবে বর্তমানে পাতুয়ারি গ্রামের কোনো অস্তিত্ব পাইনি। চন্দ্রাবতীর বাড়ি বলে পরিচিত স্থানটি কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারিপাড়া গ্রামে। কালের বিবর্তনে এলাকার নামও পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাঁর পিতা মনসামঙ্গল কাব্যধারার অন্যতম কবি এবং ‘পদ্মপুরাণ’-এর রচয়িতা দ্বিজ বংশীদাশ এবং মাতা সুলোচনা(অঞ্জনা)। চন্দ্রাবতীর মৃত্যু নিয়ে অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে। কারো মতে তিনি যৌবন বয়সেই আত্মহত্যা করেছেন, কারো মতে তিনি ১৬০০ সালে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কারো মতে প্রেমিক জয়ানন্দের মৃত্যুর পর শিব মন্দিরে প্রবেশ করে ধ্যানমগ্ন অবস্থাই মৃত্যু বরণ করেন। কিশোরগঞ্জের গাংগাটিয়ার জমিদারদের ৪ শ বছরের পুরোনো ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রেমিকের মৃত্যু সইতে না পেরে চন্দ্রাবতী আত্মহত্যা করেছেন। তবে এই বিষয় নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। এই ভিডিওতে চন্দ্রাবতীর স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো ধারণ করার পাশাপাশি তাঁর বাড়ি নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সেটার অনুসন্ধান করার কিছুটা চেষ্টা করেছি। কারণ চন্দ্রাবতী যেখানে নিজেই তার অনুদিত রামায়ণের কবি পরিচয়ে লিখেছেন- “ধারাস্রোতে ফুলেশ্বরী নদী বহি যায়। বসতি যাদবানন্দ করেন তথায়॥ ভট্টাচার্য্য বংশে জন্ম অঞ্জনা ঘরণী। বাঁশের পাল্লায় তাল-পাতার ছাউনী॥ … … … ….. …. …… …… … …. … বাড়াতে দারিদ্র-জ্বালা কষ্টের কাহিনী। তার ঘরে জন্ম নিলা চন্দ্রা অভাগিনী॥ সদাই মনসা-পদ পূজি ভক্তিভরে। চাল-কড়ি কিছু পাই মনসার বরে॥ যেখানে উনি নিজেই লিখেছেন-বাঁশের পাল্লার তালপাতার ছাউনির বাড়ি ছিলো তাদের।অনেক অভাব ছিলো পরিবারে। সেখানে একটি দ্বিতল ইটের পাকাবাড়ি অনেকেই চন্দ্রাবতীর বলে চালানোর জন্য অতিরঞ্জিত তথ্য উপস্থাপন করছেন কীভাবে সেটাই আমরা বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে দলিল-দস্তাবেজ থেকে দেখানোর চেষ্টা করেছি। চন্দ্রাবতী ওই এলাকার লোকসাংস্কৃতিক পাটাতনে তথা লোকমানসে যথেষ্ট সমুজ্জ্বল। বঙ্গের সুবিদিত লোকসাহিত্যগবেষক ও লেখক দীনেশচন্দ্র সেন ও ক্ষিতিশ চন্দ্র মৌলিকের সম্পাদনায় প্রকাশিত যথাক্রমে মৈমনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকায় ‘চন্দ্রাবতী’ পালাটি রয়েছে। এমনকি চন্দ্রাবতী লিখিত ‘মলুয়া’, ‘দস্যু কেনারামের পালা’ ও ‘রামায়ণ’ পালাও এতে সংকলিত আছে। চন্দ্রাবতী রচিত গীতিকা ‘মলুয়া’ ও ‘দস্যু কেনারামের পালা’—এই দুই পালায় তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোকসমাজ ও সংস্কৃতির চিত্র মুনশিয়ানার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। যে সময়ে লেখকেরা সাধারণত দেবদেবীনির্ভর সাহিত্য রচনা করতেই আত্মনিয়োগ করতেন বেশি, সে সময়ে লোককবি চন্দ্রাবতী সাধারণ মানুষের সুখদুঃখ, প্রতিবাদ আর বীরত্বের জয়গানই গেয়েছেন তাঁর এ দুটি গীতিকাপালায়। এমনকি যে ‘রামায়ণ’ পালাটি চন্দ্রাবতী তাঁর জীবনের এক পরিণতকালে রচনা করেছেন বলে জানা যায়, সেখানেও তিনি প্রচলিত-প্রতিষ্ঠিত কৃত্তিবাসী বা বাল্মীকির ‘রামায়ণ’–কাহিনিকে অনুসরণ করেননি, বরং এ বিষয়ে গ্রাম্যগল্পকে প্রাধান্য দিয়ে এক ব্যতিক্রমী ‘রামায়ণ’ পালা রচনা করেন। চন্দ্রাবতী তাঁর ‘রামায়ণ’ পালাগানে কোনো প্রকার ভক্তিরস, বীররস, শৃঙ্গাররস তুলে ধরেননি। কেবল মধুর আর করুণরসকে উপজীব্য করে গড়ে তুলেছেন কাহিনি। কবি তাঁর রচনায় সীতাকে দেখিয়েছেন মুখ্যরূপে। প্রচলিত রামায়ণকারদের পথে না হেঁটে সীতার জীবনকেই পাঠককুলের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছেন চন্দ্রাবতী। চন্দ্রাবতীর ‘রামায়ণ’ তিন খণ্ডে বিভক্ত। এ রীতিটিও ধ্রুপদি রামায়ণধারাবিরোধী। প্রথম পরিচ্ছেদ শুরু করেছেন তিনি লঙ্কার বৈভব ও রাবণরাজের বীরত্ব-বিজয় মহিমা দিয়ে। এ পরিচ্ছেদ তিনি রামের আগে সীতার জন্মকাহিনির মধ্য দিয়ে শেষ করেছেন, যেখানে সীতার পৌরাণিক জন্মকাহিনিকেও তিনি অনুসরণ করেননি, উপরন্তু এখানে লোকমুখে প্রচলিত গল্পকে বর্ণনা করেছেন চমৎকারভাবে। এভাবেই কবি চন্দ্রাবতী আজও জীবন্ত হয়ে আছেন কিশোরগঞ্জের লোকসাংস্কৃতিক পরিবেশনাশিল্পের সঙ্গে। জীবন্ত হয়ে আছে ইতিহাসখ্যাত কবির সেই শিবমন্দিরটি, যেখানে বসে সপ্তদশ শতকের এক কাব্যপ্রেমী নারী আমৃত্যু চালিয়ে গেছেন তাঁর জীবন ও কাব্যসাধনা। শিবমন্দিরটি কালের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে কিংবদন্তি এই কবির সে স্মৃতিচিহ্নকে এখনো আগলে রেখেছে পর্যটক-পথিক ও মানুষের কাছে। চন্দ্রাবতীর ইতিহাস-পরম্পরাকে ধারণ করে আছে যে সত্য-স্মৃতিচিহ্নঘেরা স্থান, তাকে আরও যথাযথ মর্যাদায় সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কেননা, বাংলাদেশের এ লোককবিকে শ্রদ্ধাভরে শনাক্ত আর স্মরণ করার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যথাযথ একটি স্থান তো দরকার।

Categories
AfnansBee
Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *